Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফলের আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়াতে করণীয়

ফলের আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়াতে করণীয়
মৃত্যুঞ্জয় রায়
বিপর্যস্ত আবহাওয়া আর চারদিকে এত অসুখ-বিসুখের মধ্যেও ভালো খবর হলো এদেশের মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার আগ্রহ ও পরিমাণ বেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ফল খাওয়া উচিত ২০০ গ্রাম। বিবিএস-এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে একজন মানুষের রোজ ফল খাওয়ার পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৫.৮০ গ্রাম। বর্তমানে এ দেশের মানুষের ফলমূল খাওয়া ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তাই বিবিএস-এর এই জরিপের তথ্য আমাদের জন্য সুসংবাদ বটে। এর অর্থ এ দেশের মানুষ এখন নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা ভাবছে, ফল খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি ফলের উৎপাদনও বাড়ছে। এ দেশে ২০০৮-২০০৯ সালে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি টন, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ টনে, বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ।  
এক জরিপে দেখা যায় বয়স নির্বিশেষে দেশের প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষের রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ বেশি, দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের ফ্যাটি লিভার রয়েছে। এর কারণে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা, বাড়ছে হৃদরোগসহ নানা রকম অসুখের ঝুঁকি। পাশাপাশি এই ঝুঁকি কমাতে পারে নিয়মিতভাবে নিরাপদ ফল ও শাকসবজি গ্রহণ করা।
বিদেশী ফলের আমদানি
মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার অভ্যাস বদলানো বা ফল খাওয়া বাড়ানোর পেছনে শুধু যে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি কাজ করছে তা নয়- এক্ষেত্রে এদেশে সারা বছর ধরে সাম্প্রতিক সময়ে দেশী-বিদেশী ফলের প্রাপ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে এ দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপন্ন হতো তার প্রায় শতকরা ৫৬ ভাগ ফল পাওয়া যেত গ্রীষ্ম-বর্ষা ঋতুর চার মাসে। বাকি ৪৪ শতাংশ ফল পাওয়া যেত বছরের বাকি আট মাসে। শীতকালে দেশি ফল বলতে ছিল কুল, কলা-পেঁপেও পাওয়া যেত কম। তাই শীতকালে ফল খাওয়ার জন্য আমাদের নির্ভর করতে হতো বিদেশী ফল কমলা, আপেল, আঙুর, নাশপাতি, খেজুর ইত্যাদি ফলের ওপর। এ কারণে সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আট মাসে এ দেশে বিদেশী ফল আমদানি করা হয় বেশি, সবচেয়ে বেশি ফল আমদানি করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি- এই পাঁচ মাসে।
বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় ফল আমদানিতে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত শুল্ক আরোপ করে সরকার, বন্ধ করা হয় ফল আমদানিতে ব্যাংকের ঋণ সুবিধা। এর প্রভাবে ফলের আমদানি কমে ৩০ থেকে ৩৮ শতাংশ। কিন্তু আমদানি কমলেও মানুষের ফল কেনা ও খাওয়ার প্রতি তার তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। বরং ফলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশী ফলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ বেশি করে দেশী ফল কেনার দিকে ঝুঁকছে। আমরাও তা চাই- মানুষ বিদেশী ফল ছেড়ে দেশী ফল খাওয়া অভ্যাস করুক। যে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমরা ফল খাই, বিদেশী ফল কখনো তা দেশী ফলের মতো পূরণ করতে পারে না। বরং বিদেশী ফলে নানারকম রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তা খাওয়া পুষ্টিকর হয় না। মনে রাখা উচিত, বিদেশী ফল কখনোই দেশী ফলের মতো টাটকা না-বাসী বা অনেক দিন আগে গাছ থেকে পাড়া, গাছ থেকে পাড়ার পর যত দিন যায় সেসব ফলের পুষ্টিমানও তত কমতে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে দুই ধরনের ফল আমদানি করা হয়- ‘তাজা ফল বা ফ্রেশ ফ্রুটস’ ও ‘শুষ্ক ফল বা ড্রাই ফ্রুটস’। ফ্রেশ ফ্রুট ক্যাটাগরিতে আছে আপেল, কমলা, মাল্টা, ম্যান্ডারিন, আনার বা বেদানা, আঙুর, নাশপাতি, ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরী, কিউইসহ ৫২ রকমের ফল। ড্রাই ফ্রুটস ক্যাটাগরিতে আমদানি করা হয় খেজুর, কিসমিস, আলুবোখরা, বিভিন্ন প্রকার বাদাম ইত্যাদি। এসব ফল আমদানি করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, ভুটান, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশ থেকে। এ দেশে সবচেয়ে বেশি ফল আসে ভারত থেকে।
প্রতি বছর এ দেশে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন ফল আমদানি করতে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। ডলারের এই আকালের দিনে বিদেশী মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে সরকার অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের ফল আমদানিকেও নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে দেশের বাজারে এখন বিদেশী ফলের প্রাপ্যতা গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে এখন সারা বছরই এ দেশে ফল উৎপাদনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশী ফলের রপ্তানি
আমরা যদি ফলের বাজারের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে শীত কিংবা শরতেও দেখতে পাব, দোকানের ডালি ভরা টসটসে ডাশা পেয়ারা, তরমুজ, কলা, পেঁপে, আনারস, কুল, ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরী ইত্যাদি ফল। এখন অনেক ফল অমৌসুমেও চাষ হচ্ছে। এমনকি গ্রীষ্মকাল ছাড়াও এখন অন্য মৌসুমে মিলছে দেশে উৎপাদিত আম, বাঙ্গি বা মেলন ও তরমুজ। ফলের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গবেষণা ও সম্প্রসারণে সত্যিই এক চমৎকার রূপান্তর ঘটেছে। দেশে বর্তমানে সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন ফল উৎপাদিত হচ্ছে। বছরে ফলের ফলন বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে, বিশ্বে বাংলাদেশ কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম ও পেঁপে উৎপাদনে চতুর্দশতম। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলেছে, বিগত বিশ বছরে বাংলাদেশে ফল চাষের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে, ফল চাষের জমি বেড়েছে বছরে ১০ শতাংশ হারে। গত ১০ বছরে এ দেশে আম ও পেয়ারার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, পেঁপের আড়াইগুণ, লিচুর ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া মাল্টার ১৫-২০ শতাংশ হারে ও কমলার ৫ শতাংশ হারে প্রতি বছর উৎপাদন বাড়ছে।
বিশ্বে অন্যতম রপ্তানিযোগ্য ফলগুলো হলো আম, ম্যাঙ্গোস্টিন, পেয়ারা, আনারস, অ্যাভোকেডো, পেঁপে ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক বাজারে ১ টন আমের জাতভেদে মূল্য ১২৪৩-১৪৬২ ইউএস ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি কেজি আমের পাইকারি দাম প্রায় ২.৫ ইউএস ডলার। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি করে চীন। এফএও-এর তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, চীন ২০২২ সালে সে দেশ থেকে আম রপ্তানি করে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৫ টন। গত বছর ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে আম রপ্তানি করে ৭৮৪৮০ টন ও ১৪০৫০১ টন। বাংলাদেশে বছরে প্রায়            ২৪-২৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ১ লাখ টন আম রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের আম রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে ২০১৮-২০১৯ সালে ৩১০ টন, ২০১৯-২০২০ সালে ২৮৩ টন, ২০২০-২০২১ সালে ১৬৩২ টন, ২০২১-২০২২ সালে ১৭৫৭ টন আম রপ্তানি করা হয়। ২০১১-২০২২ সালে রপ্তানিকৃত আমের মূল্য ছিল ১৭ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হলেও এর প্রায় ৩০ শতাংশ বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হয়। সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ফলের এই অপচয় কমাতে হবে।
বিশ্ববাজারে মোট ২১ জাতের আম বিভিন্ন দেশ থেকে রপ্তানি করা হয়। এগুলোর মধ্যে হিমসাগর জাতের আম এ দেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে বিদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি দেশী জাত ছাড়া এখন কাটিমন, তোতাপুরী, নাম ডক মাই, মিয়াজাকি, অলফ্যানসো, কেইট, পালমার ইত্যাদি জাতের মতো বেশ কিছু বিদেশী জাতের আমও এ দেশে সীমিত আকারে চাষ করে সাফল্য পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় বাজারে টমি অ্যাটকিনস, কেইট ও কেন্ট জাতের আমের বিপুল চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য বেশ কিছু বিদেশী ফল বিশেষ করে ড্রাগন ফ্রুট চাষে যেন বিপ্লব ঘটে গেছে। এ ছাড়া স্ট্রবেরী, অ্যাভোকেডো, রাম্বুটান, ম্যাঙ্গোস্টিন, আলুবোখরা, রকমেলন, আঙুর ইত্যাদি ফল এদেশে চাষ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাভোকেডোর বৃহত্তম আমদানিকারক। সে দেশে ১ টন (১০০০ কেজি) অ্যাভোকেডোর মূল্য প্রায় ৩৪০০ ইউএস ডলার। আগ্রহী ফল চাষিদের যদি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় এসব রপ্তানিযোগ্য ফল চাষেও এদেশে সফলতা আসতে পারে।
সারকথা
দেশের অনেক মানুষ জানেন যে, বিদেশী ফলের চেয়ে দেশী ফল বেশি টাটকা ও পুষ্টিকর, দামেও সস্তা। এক কেজি আপেলের দামে ৫ কেজি পেয়ারা কেনা যায়, ১ কেজি কমলার দামে কেনা যায় ১০টা বাতাবি লেবু। তাই দেশী ফল খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। যে ফল যে অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ায় ভালো হয় সেখানে সেই ফলের নিবিড় চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রধান তিনটি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই ও অনুসন্ধান করে কোন কোন ফল রপ্তানিযোগ্য ফল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায় তা চিহ্নিত করে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, দ্বিতীয়ত চুক্তিভিত্তিক ফলচাষি নির্বাচন করে এলাকাভিত্তিক ফল চাষ করতে হবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করে এবং তৃতীয়ত আন্তর্জাতিক মানের অ্যাক্রিডিটেশন ল্যাবরেটরি স্থাপনের মাধ্যমে রপ্তানির জন্য মান যাচাই ও প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশী ফলের আমদানি ও বিপণন সীমিত বা নিরুৎসাহিত করতে হবে।

লেখক: কৃষি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন ও অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই- মেইল : শনফসৎরঃুঁহ@মসধরষ.পড়স

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon